নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৭০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বাকি ১৩০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
প্রায় প্রতিটি আসনেই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোন কোন আসনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা জানা যায়নি। সরকার গঠন করতে হলে দলের মনোনীত প্রার্থীদের অন্তত ১৫১টি আসনে বিজয়ী হতে হবে। যেহেতু প্রধান প্রতিপক্ষ- বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলি – নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের বলেছে যে তারা চাইলে তারা স্বতন্ত্র হিসেবে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
এটি করেছে কারণ, ভেবেছিল এই পদক্ষেপটি ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াবে এবং নির্বাচনকে উৎসবময় করে তুলবে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, এই কৌশল ইতোমধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী আমেজ ও উৎসবের আমেজ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না এবং সে কারণেই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১টি আসন পেতে চায়।
দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে সর্বত্রই অন্তঃদলীয় কোন্দল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া কয়েকজন হেভিওয়েটসহ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতা ইতোমধ্যে প্রায় প্রতিটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বা জমা দিতে চলেছেন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে শুনে তারা এমনটি করেছে। এছাড়াও, দলীয় নেতা-কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, বিশেষ করে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে তখন দলীয় স্বতন্ত্রদের কারণে আগামী দিনে সারা দেশে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সহিংসতা দেখা দেবে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখের পর এত স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না। প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “আমি যতদূর জানি, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিশ্চিত করবে দলটি। ওইসব আসনে কোনো দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না। তিনি বলেন, অন্তত ১৭০টি আসনে ইতোমধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলবে দলটি। “অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় কোনো দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না।
বাকি নির্বাচনী এলাকায় তাই কোন্দল ও বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা কম। কারণ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র উভয়েই আওয়ামী লীগের সদস্য।” আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, দলের মনোনীত প্রার্থীদের অধিকাংশই বিজয়ী হবেন। “কিছু জায়গায় ব্যতিক্রম হতে পারে, তবে সেই সংখ্যা কম হবে।” এছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, কেউ যদি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই ওই আসনের মনোনীত প্রার্থীকে জানাতে হবে। তা না হলে তিনি আর আওয়ামী লীগে থাকবেন না। কারণ ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী এক নয়।”
তিনি আরও বলেন, সহিংসতার কোনো সুযোগ নেই এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে। তৃণমূল নেতারা মনে করেন, মনোনয়নপ্রাপ্তরা যোগ্য না হলে জনগণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। তফশিল অনুযায়ী, আগামী ৩০শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ইতোমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হবে না।
আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপরে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে।” তিনি আরও বলেন, “১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, সংশোধন, অ্যাকোমোডেশন- সব কিছুই করতে পারি।”
https://slotbet.online/