বিশেষ প্রতিনিধি, গুইমারা, খাগড়াছড়ি :
অনিয়মের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে গুইমারা উপজেলা। টাউন হল দখল, যাত্রীছাউনি অবৈধ দখল, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে যেখানে সেখাটে দোকানপাট নির্মাণ, ড্রেন অপরিষ্কারের কারনে ময়লার বাঘাড়, বানিজ্যিক সেট পরিচালনায় অনিয়ম, টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম, পানি সাপ্লাইয়ে অনিয়ম, কোপারিটিবের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ নানান অনিয়ম আর অপরাধের আতুড়ঘর গুইমারা।
গুইমারার টাউন হলের জায়গায় শ্রমিকদের আবাসস্থল গড়ে তোলা হয়েছে। কে বা কারা তাদেরকে সরকারি ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার সঠিক তথ্য জানে না কেউই। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির সরকারি মালামাল ক্ষয়-ক্ষতি হলেও নেই দেখার কেউ। এছাড়াও গুইমারা বাজারের দক্ষিণ পাশে ব্রীজের নিচে ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গাটিও এক প্রভাবশালী সহায়তায় দোকান ঘর নির্মাণ করে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে দেখা, গুইমারা বাজারের ফুটপাত দখলের চিত্র এখন একটি লক্ষণীয় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। দোকান প্লটের সামনে ত্রিপল এবং টিনশেড করে দোকানের পরিধি বাড়ানো গুইমারা বাজারের নিত্তনৈমিত্তক ঘটনা। যদিও উপজেলা প্রশাসন কঠোর হস্তে দমন করবেন বলে নোটিশ দিলেও অদৃশ্য কারনে কোনো ব্যাবস্থা গ্রহন করেন নি। যত্রতত্র ফুটপাত দখল করে যেখানে সেখানে স্থাপনা ও টং দোকান নির্মাণ করে ফুটপাত দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এসব অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের তান্ডবে স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় ভুগছেন প্রতিনিয়ত। ফুটপাত দখল করে কাঁচামালের বিভিন্ন পঁচা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। আর সেই পঁচা আবর্জনা থেকে রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায় ও পথচারীদের মাঝে। তাছাড়া আসছে বর্ষার মৌসুমে এসব আবর্জনা থেকে বিভিন্ন বায়ু দূষিত রোগ ও ডেঙ্গু মশার প্রর্দূভাব দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা আরো বলেন, গুইমারা ঐতিহাসিক সাপ্তাহিক দুইদিন শনিবার (ছোট বাজার), মঙ্গলবার (বড় বাজার) বসে। বিশেষ করে সিএনজির অবৈধ পার্কিং এবং এই দুইদিন দুর-দুরান্ত থেকে আসা পরিবহন গুলো বাজারের ফুটপাত দখল ও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যানযটের মধ্যে পরে, যার ফলে পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সম্মূক্ষীন হতে হয়। এমনকি দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া গুইমারা সদরেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা, ২টি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় (কলেজ)। ফুটপাত দখলের জন্য স্কুল কলেজ ছুটি হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই এসব ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় এলাকাবাসী।
গুইমারা বাজারের বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের প্রবেশমূখেই অবৈধ ভাবে তিনটি ফলের দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও তার পাশেই রয়েছে মুচির দোকান ও সবজি বিক্রেতাদের হিরিক। যার ফলে বাজারের প্রবেশ করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় প্রশাসনিক ব্যক্তিসহ পথচারীদের।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় বেশকয়েকজন জানায়, যে যেভাবে পারছে ফুটপাত-রাস্তা দখল করে নিজেদের স্বর্গরাজ্য তৈরি করছে। আর এসব অবৈধকর্মকান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করে বাজার কমিটি। যদিও জেলা পরিষদের অর্থায়নে তিন তলা বিশিষ্ট মাছ, মাংস, চাল ডাল ও সবজি বিক্রয়ের সেট নিমার্ণ করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত তিন তলা বিশিষ্ট সেটের নিজ তলায় মাছ বিক্রয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য দিলেও বাকী ২য় ও ৩য় তলা তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখেছে কোনো এক অদৃশ্য কারণে।
এছাড়াও গুইমারা বাজারের যাত্রীছাউনীতে চারটি দোকান প্লট সরকারি অর্থায়নের নির্মাণ করা হলেও তা দখল করে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্ষমতায়বলে মোটা অংকের জামানত নিয়ে ভাড়া দিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর। এই নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও কয়েক বছর পর পর দোকানগুলো নিলামে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
অপরদিকে স্বল্প আয়ের মানুষ ও অসহায়দের জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক টিসিবির পণ্য বিতরণে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্ডধারী গ্রাহকরা টিসিবির পণ্য উত্তোলনের জন্য গেলে মাল নেই বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয় কিন্তু দেখা যায় বেলাশেষে বিভিন্ন মুদি দোকান ও নিজেদের একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের নিকট বিক্রয়ে মেতে উঠেছে। গুইমারায় এই পণ্য বিতরণের দায়িত্ব আছে সুমন কর এবং হাফছড়ি ইউপিতে আব্দুর রহিম ও ঠিকাদার রুবেল।
জানা যায়, গুইমারা বাজার ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় পানি সরবরাহের ট্যাঙ্ক ও মোটর। কিন্তু এখান থেকে বাজার ব্যবসায়ীদের ঠিকমতো পানি পায়না বলে অভিযোগ করে বলেন, বাজারের জন্য নির্মিত পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হলেও ঠিকমতো পানি পাওয়া যায়না। কিন্তু পানির বিল দিতে হয় ঠিকই। এসব অনিয়মের শেষ কোথায় জানতে চায় অনেকেই।
পরিদর্শনে আরো জানা যায়, কোপারিটিপের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করছে স্থানীয় একাটি মহল। এসব অনিয়ম দুর্নীতি থেকে চিরতরে মুক্তি চায় স্থানীয় সচেতন মহল ও বাজার ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি গুইমারা উপজেলা প্রশাসন গুইমারা বাজার পরিদর্শন কালে বিভিন্ন দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে ত্রিপলের ছাউনি টাঙিয়ে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করতে দেখে। পরক্ষণেই এসব ছাউনি সড়িয়ে নেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারী করে। কিন্তু অদ্যবদি পর্যন্ত এর কোনো কার্যক্রম কিংবাদ ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে এসব ব্যবসায়ীরা আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, গুইমারা ব্রিজের পাশে ড্রাম রাখার অভিযোগটি ইতিমধ্যেই পেয়ে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পরিদর্শনের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। তার সাথে যোগাযোগ করার পরার্শম প্রদান করেন।
পরে গুইমারা উপজেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিপন চাকমার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ব্রিজের পাশের জায়গাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে ড্রামসহ কিছু মালামাল রাখা দেখে ব্যবসায়ীদের এসব সরানোর নিদের্শ প্রদান করি।
https://slotbet.online/