হাজী মুছা : গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত শিক্ষক বদলী, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন, বিনামূল্যে বই বিতরণে বৈষম্য, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের দোকানদার বলে কটুক্তি, শিক্ষক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রত্যাহার সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন, যোগদানের করেই সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলার ৯৬২ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের লক্ষাধিক শিশুকে বই না দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে দোকান বলে কটুক্তি করেন। এর প্রতিবাদে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা তার অপসারণ দাবি করে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক গাজীপুর, ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর স্মারক লিপি সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ২১ জানুয়ারি উপ পরিচালক তৌহিদুল ইসলামকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও গরিমসির অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে খানিক বিলম্বের কথা স্বীকার করে তদন্তে গরিমসির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আগামী দু একদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান।
অনলাইনে শিক্ষক বদলীতে অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। উপজেলার ঝাজর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিনা রানী বালা শিক্ষক বদলীতে অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম উপজেলাধীন লাগালিয়া আমির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চতর নসর উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূত বদলীর অভিযোগ রয়েছে । বদলীতে বিধি লঙ্ঘন করে অফলাইনে বদলীর অভিযোগ করেছেন বদলী বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষক। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ আলম বলেন সকল অভিযোগের বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নিয়মের বাইরে কিছু হলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ও বিধি লঙ্ঘন করে চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেন শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম । এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন উপজেলার বাসিন্দা মেহেদী হাসান । অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিভাগীয় উপ পরিচালক আলী রেজা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে অতি দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়। উল্লেখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন নীতিমালা ২০২৩ মোতাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শন পূর্বক পাঠদানের সুপারিশ করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশের আলোকে যাচাই বাছাই করে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি দিবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। নিবন্ধন দিবেন বিভাগীয় উপ পরিচালক। জানা যায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার চারটি স্কুল পাঠদানের অনুমতির আবেদন করেন। আবেদনের একদিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি অধ্যাদেশ, ডিডি, ডিজিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চারটি স্কুলকে নিবন্ধনের অনুমতি প্রদান করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম। এ বিষয়ে আব্দুস সালামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোছাদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম একজন দূর্ণীতিগ্রস্থ শিক্ষা অফিসার। তার পূর্বের কর্মস্থলেও বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।গাজীপুর সদর উপজেলায় যোগদান করেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেছেন। বই বানিজ্য, নিবন্ধন বানিজ্য, শিক্ষক বদলী বানিজ্য সহ সরকারি বরাদ্দে কমিশন বানিজ্যের পায়তারা করছেন। অনতি বিলম্বে তাকে অপসারণ করা না হলে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন গাজীপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র মন্ডল বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম শিক্ষকদের দোকানদার বলে অসম্মানীত করেছেন। সে একজন চিহ্নিত দূর্নীতীপরায়ন অফিসার তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নাম প্রকাশে একাধিক ভূক্তভোগী জানান, আব্দুস সালাম নিজ কার্যালয়ে বসে নিজেকে রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে তিনি বেপরোয়া আচরণ সহ বিভিন্ন অনিয়ম করছেন।
https://slotbet.online/