নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনে বিপুল ভোটার উপস্থিত করে একটি ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার পরেও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে সারাদেশে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা সহ বেশ কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অনেকেই মনে করছেন, বিরোধী দল-বিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো হবে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বাড়ানোর দলীয় কৌশল বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উঠান বৈঠক, কর্মীসভা এবং আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনের দিন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে। আওয়ামী লীগ ভোটের দিন ভোটারদের সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের মতো আরেকটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন এড়াতে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে এক আসনে নিজেদের একাধিক প্রার্থী রাখার সুযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সূত্র জানিয়েছে, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে ৩০০ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন যারা ৭ জানুয়ারি সকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তাদের নির্ধারিত ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। ডিএনসিসির অধীনে ৫৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। ডিএনসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সেলিম বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে নিয়ে আসা। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন ক্লাব ও অন্যান্য জায়গায় মিটিং করছি। আমরা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট না দিলে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা না দিলেও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে ডিএসসিসির ৭৫ ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও ভোটারদের একত্র করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। ডিএসসিসি ওয়ার্ড-১৬ কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, বিএনপি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করায় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসাকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে সমর্থনকারীরা ভোট দিতে আসবে না। অন্যদিকে তারা সাধারণ মানুষকে ভোট বর্জন করতে উৎসাহিত করছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ ভোটারদের আনা, যারা কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না।’ তিনি জানান, তার ওয়ার্ডের অধীনে ১৯টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাতে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নির্বাচনে ভোট দিতে নাগরিকদের উৎসাহিত করা বাংলাদেশের পুরনো ঐতিহ্য। তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনের মতো প্রার্থীরা সকাল-বিকাল ভোটারদের নিয়ে আসতে প্রতিনিধি পাঠাবেন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা রিকশা, রিকশা-ভ্যান ও নৌকা রেখে ভোট দেওয়ার সহজ সুযোগ তৈরি করেন। ডিএনসিসির ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন, আগামী নির্বাচনে ভোট না দিলে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডের সুবিধা বন্ধ রাখা হবে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গুলশানে নিজ বাড়ির সামনে কাউন্সিলরকে এ মন্তব্য করতে শোনা যায়। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম প্রশ্নটি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিটি মানুষের টিসিবি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের ভূমিকা
বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না, আবার বাধা দেয়ারও শঙ্কা রয়েছে। তাই ভোটের মাঠে তৃণমূলের ঐক্য এবং সক্রিয়তা হবে গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্র এবং দলীয় প্রার্থীর কৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে মাঠ পর্যায়ের এ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে। এবার জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছে। সারাদেশে গঠন করা হয়েছে চল্লিশ হাজারের বেশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। দলের সব ইউনিট ও সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের এ নির্বাচনে ভোটার টার্নআউট নিশ্চিত করতে কাজ করবে বলেই তৃণমূলে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তেঁতুলিয়া, আটোয়ারি এবং সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসনের মোট ভোটার ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার। আমাদের প্রতিনিধি তেঁতুলিয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছেন তারা কীভাবে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ্জামান জানান তারা প্রস্তুত আছেন। স্থানীয় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। “আমরা বিভিন্ন গ্রামে ওয়ার্ডে মিটিং করে বেড়াচ্ছি যে ভোট অবশ্যই দিতে হবে। কারণ দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের ভোটকেন্দ্রে যাবার বিকল্প নেই।” তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিঞা বলেন তাদের বক্তব্য বোঝা যায় বিরোধী দলের সমর্থক বা বিএনপির ভোটারদেরকেও ভোটকেন্দ্রে আনতে চান তারা। “আমরা বলবো ঠিক আছে আপনি নৌকাকে পছন্দ করেন না, নৌকার প্রার্থী যে আছে তাকে পছন্দ করেন না তাহলে যাকে পছন্দ তাকে দেন। কিন্তু ভোট দেন। আপনার মতামতটা পেশ করেন। এটাই আমাদের বক্তব্য থাকবে।” পঞ্চগড়ে উপজেলাভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আছে আওয়ামী লীগের। তেঁতুলিয়া উপজেলা কমিটির একজন উপদেষ্টা কাজী মাহবুবুর রহমান বলছেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কেন্দ্রীয় টার্গেট বাস্তবায়নে তফসিল ঘোষণার আগে থেকে তাদের প্রস্তুতি চলছে। “যেকোনোভাবে হোক আমরা ভোটারদেরকে সেন্টারে নিয়ে আসবো। ভোট কাকে দেবে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এবং এজন্য আমাদের নিজস্ব কিছু টেকনিক আছে। যেমন ধরুন যেটা সবাই জানেন যে ভোটারদের আনার জন্য যে যানবাহন দরকার সেগুলো আমার সরবরাহ করবো।”
https://slotbet.online/